একঢিলে পাঁচ পাখি😜 মানে একদিনে পাঁচ জমিদারবাড়ি।
- মহেড়া জমিদারবাড়ি
- করটিয়া জমিদারবাড়ি
- দেলদুয়ার জমিদারবাড়ি
- পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি
- বালিয়াটি জমিদারবাড়ি
প্রথমেই বলে রাখি, এই প্লান অনুযায়ী কেউ ট্যুর দিতে চাইলে সময়ের সর্বোত্তম ব্যাবহার এবং পার্সোনাল গাড়ি থাকতে হবে বা মাইক্রো ভাড়া নিতে হবে। কেননা লোকাস বাস এবং অটোতে করে আপনি ২-৩ টা জমিদারবাড়ির বেশি দেখতে পারবেন না। গাড়ির কথা শুনে যদি কারো মাথায় আকাশ ভেঙে পরে, তাকে বলবো ‘পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পরার জন্যে।’
ছোট্ট একটা মাথায় বেশি কিছু থাকেনা। তাই গুগল মামার সাহায্য নিয়ে এই প্লানটা তৈরি করেছিলাম। তারপরে ইভেন্ট খুলে আমার মত কিছু ভ্রমণপাগল মানুষকে পেয়ে যাই। গুলিস্তান থেকে রিজার্ভ হায়েস নিয়ে সকাল ৭ টায় রওনা দেওয়ার কথা থাকলেও সাড়ে সাতটা বেজে গেলো। তারপর গাড়ি মিরপুর, আশুলিয়া, বাইপেল হয়ে যানজট ঠেলে যখন মহেড়া জমিদারবাড়ি পৌছালো তখন ১১ টা পার হয়ে গেছে। সবার মুখেই হতাশার ছাপ😞। সবগুলি জায়গা কভার করা যাবেতো? এত ভাবাভাবির টাইম নেই😜, ভাবতে গেলে ভাবতে ভাবতেই জীবন শেষ হয়ে যাবে। গাড়ি পার্ক করে ৫০ টাকা করে টিকিট কেটে ভিতরে চলে গেলাম। বাড়ি দেখে নয়ন জুড়িয়ে যায় অবস্তা😍। ফটোসেশন শেষ করে চলে গেলাম একেবারে পিছন পর্যন্ত। সেখানে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ চলছিলো। পুরো পরিবেশটা অসাধারণ। তবে একটা জিনিস খারাপ লেগেছে, এখানে প্রকৃতির চাইতে কৃত্তিমতাকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। জমিদারবাড়িটি পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার হিসেবে ব্যাবহৃত হওয়ায় এর বেশিরভাগ জায়গাই সংরক্ষিত। আপনি চাইলেই যেখানে সেখানে প্রবেশ করতে পারবেন না😞। এখানে ১ ঘন্টা ঘুরে বেড় হয়ে স্থানীয় হোটেলে সিংগার সমুচা খেয়ে গাড়িতে উঠে করটিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা। যেতে সময় লাগবে আধঘণ্টা।
করটিয়া জমিদারবাড়িতে ঢোকার সাথে সাথেই শরীর মন শীতল হয়ে যায়। বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, এটাই হবে। এতসুন্দর, পরিচ্ছন্ন আর গোছানো পরিবেশ আপনি লাস্ট কবে দেখেছিলেন মনে করতে পারবেন না। সদর দরজা দিয়ে ঢুকেই লাল রঙ এর প্রাসাদের সৌন্দর্যে আপনি মুগ্ধ হয়ে যাবেন। তবে ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন না। কারণ এখানে মানুষ বাস করে। বাড়ির পিছনে বিশাল পুকুর। পুকুর পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে গেলে পাবেন বিশাল আকারের আরেকটা পুকুর। সেই পুকুরের অপরপার্শে রয়েছে অন্দরমহল। যা এখন স্কুল হিসেবে ব্যাবহৃত হয়। আমরা যেদিন গিয়াছিলাম সেদিন শুক্রবার হওয়ায় স্কুল ছুটি ছিলো। আর এই সুযোগে আমরা পুরো ভবনের ভেতর থেকে বাহির পর্যন্ত ঘুরে দেখেছি। প্রত্যেকটা রুমে ঢুকে দেখেছি। সেখানে ঘন্টা খানেক থেকে বেড়িয়ে পরুন দেলদুয়ার জমিদারবাড়ির উদ্দেশ্যে। দেলদুয়ার জমিদারবাড়ি পৌছাতে প্রায় আধাঘণ্টা থেকে চল্লিশ মিনিট সময় লাগবে।
দেলদুয়ার বাজারে পৌছে দুপুরের খাবার খেয়ে নিবেন। তারপরে হেটে জমিদারবাড়িরর দিকে চলে যান। সময় লাগবে ৫ মিনিট। আমরা গিয়ে দেখলাম জমিদারবাড়ির মূলফটক তালা দেয়া😭। এত কষ্ট করে ঢাকা থেকে গিয়ে জমিদারবাড়ি না দেখে ফিরে আসবো সেটা কি করে হয়? তাই আস্তে করে একপাশের দেয়াল টপকে ভিতরে চলে গেলাম😜। অন্যান্য জমিদারবাড়ির তুলনায় অনেক ছোট হলেও সৌন্দর্যের কোন কমতি নেই। এখানে বেশি সময় অপচয় করার দরকার নেই। ফটোসেশন আর ঘুরে দেখতে ২০-২৫ মিনিটই যথেষ্ট। সেখান থেকে বেড়িয়ে আবার যাত্রা শুরু। লক্ষ এবার পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি। সময় লাগবে ৪০-৬০ মিনিট।
পাকুটিয়া জমিদারবাড়িটার কয়েকটা ভবন। কোনটা কি ভবন বোঝা মুশকিল। এই ভবনগুলি অনেক পুরাতন। তাই সিড়ি বেয়ে ওঠার সময় সাবধানতা অবলম্বন করুন। এখানে কিছু ভবনে মানুষ এখনো বাস করে। তবে পরিত্যক্ত ভবনের ভিতর-উপর সব ঘুরে দেখতে পারবেন। এখানে আধাঘণ্টা ঘুরে ফটোসেশন শেষ করে গাড়িতে চরে বসুন। এবারের গন্তব্য বালিয়াটি।
বালিয়াটি নিয়ে আসলে আমার কিছু বলার নেই। কারণ যাই বলবো, এর সৌন্দর্য বর্ণনা করা সম্ভব না। এটাকে জমিদারবাড়ি না বলে রাজপ্রাসাদ বললেই বেশি ভালো হতো। বালিয়াটিতে থাকুন সন্ধ্যা পর্যন্ত। এরপর সেখান থেকে বের হয়ে জমিদারবাড়ির মূলফটকের সামনেই এক চাচা পিয়াজু বানায়। তার পিয়াজু খেতে ভুলবেন না কিন্তু। এরপরে আবার চিরচেনা শহর ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা। ঢাকায় পৌছাতে সময় লাগবে ২-২.৫ ঘন্টা।
খরচের হিসাব
- একটা হায়েস ভাড়া নিবে ৫০০০।
- বসতে পারবেন ১২ জন।
- জনপ্রতি পরবে ৪১৭ টাকা।
- মহেড়ায় প্রবেশ ফি ৫০ টাকা
- বালয়াটিতে প্রবেশ ২০ টাকা।
এরপরের খরচ আপনার নিজের উপর। আমাদের খরচ হয়েছিলো ৮০০ করে। এইখরচের মধ্যে ছিলো সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার, বিকেলে আনলিমিটেড পিয়াজু আর টাংগাইলের মিষ্টি খাওয়া। সারাদিনে ৫-৬ বার চা, নাস্তা। গাড়ি পার্কিং, ড্রাইভারের সারাদিনের খাবার। প্রবেশ টিকির। আরো যদি কিছু থেকে থাকে সবই ছিলো এইটাকার মধ্যে। একটু সংযত হলেই এই ট্যুর খরচ ৭০০ এর নিচে নামিয়ে আনা সম্ভব। আর যদি কেউ ১০০০ টাকা বাজেট ধরেন, তাহলে টাকা খরচ করার যায়গা খুঁজে পাবেন না😂😂😂।
আমরা যারা গিয়েছিলাম, কেউই রাস্তা চিনতাম না। এমনকি ড্রাইভারও না। ভেবেছিলাম গুগল ম্যাপ ধরে যেতে পারবো। কিন্তু ওভার কনফিডেন্স থাকলে যা হয় আরকি🙈। চলমান গাড়িতে নেট আপ-ডাউন করায় ম্যাক্সিমাম জায়গায় লোকেশন ধরতে পারেনি।
তাই আমাদের মত কোন গ্রুপ যদি যান, সেক্ষেত্রে আপনাদের শেষ ভরসা হচ্ছে স্থানীয় লোক। আমরা রাস্তার পাশে হাটা মানুষজনকে জিজ্ঞেস করতে করতে সব জায়গায় ঠিকমতো পৌছে গিয়েছি। তাই যেখানেই যান না কেনো, স্থানীয় মানুষজনের সাথে ভালো ব্যাবহার করুন। কেননা তারাই আপনাকে সবচেয়ে বেশি হেল্প করবে।
লিখেছেন – Jobayer Ahmad ST